কুমিল্লা তথা তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান শ্রীকাইল কলেজ। এটি মুরাদনগরের শ্রীকাইল গ্রামে অবস্থিত। মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রোডে ১২ কিলোমিটার গিয়ে মেটংঘর থেকে সিএনজিযোগে অতি সহজে এ প্রতিষ্ঠানে যাওয়া যায়। ‘বাণী পিঠ’ নামে ১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। এটিকে কেন্দ্র করে এলাকাটি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। নরেন্দ্র দত্ত ২১ সেপ্টম্বর ১৮৮৪ সালে শ্রীকাইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৃষ্ণ কুমার দত্ত ও মাতার নাম শর্বানি সুন্দরী দেবী। পিতা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুল, ভিক্টোরিয়া কলেজ ও কলকাতা মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করেন। তার ভাই কামিনি কুমার দত্ত একজন বিখ্যাত আইনজীবি এবং বৃটিশ শাসনামলে মন্ত্রী ছিলেন। লেখাপড়া শেষে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯১৫ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন এবং ক্যাপ্টেন পদে আসীন হন। যুদ্ধ শেষে তিনি বেঙ্গল ইউমিনিটি কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং একসময় তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে আসীন হন। তিনি এক সময় প্রচুর অর্থের মালিক হলেও ছাত্র জীবনে তিনি মুদি দোকানের কর্মচারি এবং কুলির কাজ করেন। কুমিল্লায় লেখাপড়া করার সময় তিনি ময়নামতি থেকে সব্জি কিনে এনে কুমিল্লা শহরে ফেরি করে বিক্রি করেন।
১৯৩৫ সালে তিনি সমাজসেবায় নিজেকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি নিজ গ্রাম শ্রীকাইলে তার পিতার নামে ‘কৃষ্ণ কুমার উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীকাইল কলেজ। ১৯৪৯ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হয়। কলেজের মূল ভবনটি ৩ তলা। এছাড়া রয়েছে ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার, প্রিন্সিপালের বাসভবন, খেলার মাঠ, অডিটরিয়াম, পুকুর ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। এছাড়া একটি কম্পিউটার ল্যাব ও একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে। এপাঠাগারে কিছু দুর্লভ বইসহ প্রায় ৬ হাজার বই রয়েছে। মাত্র ৫২ জন ছাত্র নিয়ে একলেজটি যাত্রা শুরু করে। প্রথম বর্ষে কোন ছাত্রী ছিলনা। ২০০০ সালে ছাত্রী ছিল ৪০০ জন। বর্তমানে ডিগ্রিতে ৩০০ জন এবং এইচএসসিতে ৬৫৪ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখা পড়া করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৭৮%। সরকারিভাবে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা বাদেও এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজের পক্ষ থেকে বই, বেতন মওকুফ ও বিশেষ ক্ষেত্রে নগদ অর্থ সহযোগিতা পেয়ে থাকে।
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ২৩৭ জন অংশগ্রহণ করে ১৩৭ জন উত্তীর্ণ হয়। লাইলী আক্তার, নাসিমা আক্তার, শ্যামলী খানম ও শাকিলা আক্তার জিপিএ ৫ পেয়ে কলেজের ভাবমূর্তি উজ্জ¦ল করেছে। এছাড়া ২০১০ সালে এ কলেজ থেকে ৭০.১০% এবং ২০০৯ সালে ৪৭.২৮% ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। এছাড়া ডিগ্রি পরীক্ষায় ১৯৯৯ সালে আঃ জব্বার বিএসএস পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে ৯ম স্থান, ১৯৯৪ সালে কাজী মোঃওয়াজেদ উল্লাহ প্রথম শ্রেণীতে ৭ম স্থান লাভ করে কলেজের গৌরব বৃদ্ধি করে। তবে এ পথের পথিকৃত হচ্ছেন অরুন দত্ত। তিনি ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত বাংলায় (আসামসহ) এইচএসসি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এখানে ৩২ জন সুযোগ্য শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৬ জন। এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ডঃ অতীন্দ্রনাথ বসু। এমএ ট্রিপল ( গোল্ড মেডেলিস্ট)। এছাড়া ডঃ অনীল ভট্টাচার্যও ধীরেন্দ্রনাথ দাসের খ্যাতি ছিল দেশ জোড়া। ১৯৫৭ সালে বন্ধ হয়ে কলেজটি আবার ১৯৬৩ সালে চালু হয়। তখন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন আঃ ওয়াদুদ। তাকে কলেজের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়। একলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বোর্ডের বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এখানে বিএনসিসিও রোভার স্কাউট দল রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মোঃ মোরশেদ মোল্লা, মোঃ হাসান ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধা বীর বীক্রম শাহজাহান সিদ্দিকী সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। এ কলেজে পদার্পন করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ফার্স্টল্যাডি বেগম রওশন এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম। এছাড়া কলেজটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এডিসি (শিক্ষা ও উন্নয়ন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, এইচএসটিটিআই এর পরিচালক প্রফেসর জালাল উদ্দীন আহমেদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ কলেজ পরিদর্শক এনএন তাজুল ইসলাম। এ কলেজের কৃতি ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে শ্রী অরুণ দত্ত, কাজী আবু তাহের, আবুবক্কর সিদ্দিক, কামরুল হাসান, রেজাউল করিম, ফুয়াদ হাসান সরকার, শাহজাহান, সাকিনা আক্তার ও আয়েশা আক্তার।
ম্যানেজিং কামটির সুদক্ষ পরিচালনা, ভাইস প্রিন্সিপাল মিয়া গোলাম সারোয়ার এবং প্রিন্সিপাল গৌরাঙ্গ চন্দ্র পোদ্দারের সার্বিক তত্তাবধানে কলেজটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কলেজটিকে আপনি লেখাপড়ার উত্তম প্রতিষ্ঠান মনে করেন কেন? এপ্রশ্নের জবাবে কলেজের অধ্যক্ষ প্রিন্সিপাল গৌরাঙ্গ চন্দ্র পোদ্দার বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা, শিক্ষকদের আন্তরিকতা প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ ও অধ্যবসায়ই এ প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতির কারণ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস